আশরাফুল আলম সরকার
বিশেষ প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুরে দুই মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও এক মাদরাসার ৮ শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকুরীর অভিযোগ উঠেছে। ঐ শিক্ষকরা গত ২০ বছরে উত্তোলন করেছেন সরকারী লাখ লাখ টাকার বেতন ভাতা। প্রতিষ্ঠান থেকেও নিয়েছেন বেসরকারী খাতের টাকা। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অডিটের সময় ফাঁক ফোকর দিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে পট পরিবর্তনের পর স্থানীয় কতক ব্যক্তি ৮ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযুক্তরা হলেন শ্রীপুর সরকারী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল হাছান একই প্রতিষ্ঠানের আইসিটি শিক্ষক মো. আলতাফ হোসেন, পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক মো.দেলোয়ার হোসেন এবং পটকা দাখিল মাদরাসার আইসিটি শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেন, ভোকেশনাল শাখার ট্রেড প্রশিক্ষক কম্পিউটার মো. নাঈম মেহেদী, আইসিটি প্রশিক্ষক মো. মকবুল হোসেন, ট্রেড প্রশিক্ষক ড্রেস মেকিং শিরিনা ও খাদিজা খাতুন।
অভিযোগে জানাযায়, অভিযুক্ত শিক্ষকগন দীর্ঘদিন ধরে জাল সনদ দিয়ে চাকুরীতে বহাল তবিয়তে আছেন। নিয়মিত তুলছেন সরকারী বেতন ভাতাদি। প্রতিষ্ঠান থেকেও নিচ্ছেন বেসরকারী খাতের বেতন ভাতা। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বিধি না মেনে এসব শিক্ষক গন নামসর্বস্ব অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের সনদ ও কম্পিউটার সেন্টার থেকে সনদ সংগ্রহ করে চাকুরীতে নিয়োগ পান। বিভিন্ন সময় শিক্ষামন্ত্রনালয় ও মহাপরিচালকের নিরিক্ষা শাখা থেকে প্রতিষ্ঠান গুলো অডিট হয়েছে। অভিযুক্তরা বিভিন্ন ফাঁক ফোকর দিয়েই রয়ে গেছেন বহাল তবিয়তে। জাল সনদের বিষয়ে মোবাইলে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে শ্রীপুর সরকারী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল হাছান জানান, তিনি বি.এড সনদ নিয়ম অনুযায়ী অর্জন করেছেন, আইসিটি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আলতাফ হোসেন জাল সনদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ২০০০সালে ঢাকাস্থ্ ইব্রাহীমপুরে অবস্থিত বগুড়া নটট্রামসের একটি আঞ্চলিক শাখা থেকে সনদ অর্জন করেন। তিনি বিধি মোতাবেক চাকুরী লাভ করেন। তাকে হয়রানী করতে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। শ্রীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ক সহকারী শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন ২০০১সালে একটি নামসর্বস্ব সেলফ্ রিলায়েন্ট এডুকেশন এন্ড ডেভেলপম্যান্ট অরগানাইজেশন থেকে সনদ অর্জন করে চাকুরী লাভ করেন। ঐ সনদে প্রায় দশ বছর চাকুরী করছেন। তার সনদটি কাম্য যোগ্য না থাকায় ফের ২০১১ সালে তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরীরত অবস্থায় প্রশিক্ষন করেন। এবিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন জাল সনদের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি বৈধ সনদ অর্জন করে চাকুরী করছেন। শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের পটকা দাখিল মাদরাসার আইসিটি শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ২০০১ সালে ঢাকাস্থ্ কচুক্ষেতের স্টুডেন্ট কম্পিউটার সেন্টার থেকে সনদ অর্জন করেন। পরবর্তীতে ঐ সনদের যোগ্যতায় ২০০২ সালে চাকুরী লাভ করে এমপিও ভূক্ত হন। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বলেন, তখনকার সময়ে এই সনদটি বিধিমোতাবেকই ছিলো। একই মাদরাসার ভোকেশনাল শাখার আইসিটি শিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন, নটট্রামসের একটি শাখা থেকে সনদ অর্জন করে ২০০৪ সালে চাকুরী লাভ করে এমপিও ভূক্ত হই। তার প্রশিক্ষন কেন্দ্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ঐ শাখার এখন অস্তিত্ব নেই। একই মাদরাসার অপর শিক্ষক ট্রেড ইন্সট্রাক্টর কম্পিউটার নাঈম মেহেদী বলেন, এ্যাপটেক নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০২ সালে সনদ অর্জন করি। ২০০৪ সালে চাকুরী লাভ করে এবং এমপিও ভূক্ত হই। বিধি মোতাবেক আমার নিয়োগ হয়েছে। অপর ট্রেড শিক্ষক শিরিনা জানান, ময়মনসিংহের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সনদ অর্জন করে বিধি মোতাবেক ২০০৩ সালে চাকুরী লাভ করি। ২০০৪ সালে আমি এমপিও ভূক্ত হই। অভিযোগ রয়েছে একই মাদরাসার অপর ট্রেড শিক্ষক খাদিজা জাল সনদে চাকুরী করছেন। তার বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পটকা দাখিল মাদরাসার সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকরা আমার দায়ীত্ব লাভের আগে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। কিভাবে তাদের নিয়োগ হয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিষয়টি তদন্ত করছেন।
শিক্ষকদের জাল সনদের অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি তদন্তানাধীন আছে। অভিযুক্ত শিক্ষকগনকে তাদের সনদ জমা দিতে নোটিশ প্রদান করেছি। এখন পর্যন্ত কেউ জমা দেয়নি। তাদেরকে দ্বিতীয়বার নোটিশ করা হবে। তাতে ও যদি জমা না দেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
Leave a Reply