1. asrafulalamsorkar@gmail.com : asrafulal amsorkar : asrafulal amsorkar
  2. admin@dainiksomoybela.com : somoy312admin :
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
জীবন দিয়ে হলেও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশনা পালন করব……এস এম জাহাঙ্গীর প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) এর ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নড়াইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা বহিষ্কার, ভাওয়াল ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ্রীপুরে ভাওয়াল ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ্রীপুরে ভাওয়াল ফাউন্ডেশন উদ্যোগে এর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫ শ্রীপুরে ভাওয়াল ফাউন্ডেশন উদ্যোগে এর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো, মেডিকো স্পেশালাইজড ডায়গনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার । কিশোরগঞ্জে বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত নড়াইলে আশুরা উপলক্ষে শিয়া সম্প্রদায়ের “তাজিয়া মিছিল”

পঞ্চগড়ে ভারতের নাগরিক হয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে নিলেন বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র

  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০২৫
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় দুই ভারতীয় নাগরিক নিজেদের পরিচয় গোপন করে বাংলাদেশি পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। এই ঘটনা শুধু অবৈধভাবে কাগজপত্র গ্রহণ নয়, বরং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অভিযুক্ত ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান এবং বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি থানার পশ্চিম মাগুরমারী গ্রামের বাসিন্দা। তারা সম্পর্কে আপন ভাই। জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেদের জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে যান। চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো বজেন্দ্র নাথের ছেলে হিতেন রায় প্রধান ভারতের আসাম রাইফেলস নামক আধা সামরিক বাহিনীতে কর্মরত।

এমন পরিস্থিতি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক বড় ধরনের সংকেত। দুই ভাই তাদের ভারতীয় নাগরিক পরিচয় গোপন করে বাংলাদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, এবং একে অপরকে পরিচয় দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছেন। সেক্ষেত্রে, এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান এবং বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের পরিচয় অনুযায়ী ভারত ও বাংলাদেশে তাদের ঠিকানা আলাদা। ভারতীয় আধার ও নির্বাচন কমিশনের পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তাদের স্থায়ী ঠিকানা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি থানার পশ্চিম মাগুরমারী গ্রামে। ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের আধার নাম্বর: ৪৪১৭০৩৯৫৪৩৯৪,নির্বাচন কমিশনের পরিচয়পত্র নাম্বর: WB/03/015/222490 এবং বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের আধার নাম্বর: ৬৪৬৭২৫৮০৯৪৩৪, নির্বাচন কমিশনের পরিচয়পত্র নাম্বর: JLG3534427 ।

অন্যদিকে জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাদের ঠিকানা দেখানো হয়েছে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের জায়গীর পাড়া। ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বর: ১০৪৬৭৪৬২২৬, জন্ম নিবন্ধন নাম্বর: ১৯৫৪৭৭১২৫৮০০১৩৯৭২ এবং বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বর: ৭৩৭৯১১৩০৭৪,জন্ম নিবন্ধন নাম্বর: ১৯৫৭৭১২৫৮০০১৪০২০।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ভারতীয় দুই ভাই বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের জায়গীর পাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা পরিচয়ে ভুয়া নাগরিক সনদ, হোল্ডিং ট্যাক্সের কাগজ, ওয়ারিশ সনদ সবই তৈরি করেন জালিয়াতির মাধ্যমে। এই কাগজপত্র দিয়ে বোদা উপজেলা নির্বাচন অফিস তাদের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করে গত বছর ১১ ডিসেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করেন।

এদিকে সরেজমিনে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের জায়গীরপাড়া এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান ও বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধান নামে কেউ ওই এলাকায় বসবাস করেন না। এমন নামের কোনো ব্যক্তিকে তারা কখনও দেখেননি বা চেনেন না বলেও জানান স্থানীয়রা।

জায়গীর পাড়া গ্ৰামের ষাট উর্ধো দূর্লভ চন্দ্র বলেন, দেশ স্বাধীনের সময় আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমার জানামতে এই এলাকায় ভবেন্দ্র নাথ, বজেন্দ্র নাথ নামে কোন লোক আগেও ছিল না। এখনো এই নামে কেউ নেই।

একই গ্ৰামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের জায়গীর পাড়া এলাকায় ভবেন্দ্র নাথ এবং বজেন্দ্র নাথ এই নামে কেউ নেই। তারা এই এলাকার ঠিকানা দিয়ে কীভাবে এখানকার নাগরিক হলো তারাই ভালো জানে।

এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে যাচাইকারী হিসেবে স্বাক্ষর করতে হয়। কিন্তু ভবেন্দ্র নাথ ও বজেন্দ্র নাথের জাতীয় পরিচয়পত্রে তার কোনো স্বাক্ষর নেই বলে জানান মাড়েয়া ইউনিয়নের ৭ নাম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মফিজ উদ্দিন।

তিনি বলেন, এই লোকগুলোকে আমি চিনিও না, কখনও দেখিও নাই। জাতীয় পরিচয়পত্র কারা করেছে, কীভাবে করেছে-সে বিষয়েও আমার কোনো ধারণা নেই। আমি কোনো স্বাক্ষর দেই নাই।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, অভিযুক্তরা জালিয়াতির মাধ্যমে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রই সংগ্রহ করেননি, বরং সেই পরিচয় ব্যবহার করে দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে ওয়ারিশ সনদও গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও, তারা বাংলাদেশি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন এবং মোবাইল অপারেটরের সিমকার্ড সংগ্রহ করেছেন।

এবিষয়ে অভিযুক্ত ভারতীয় নাগরিক বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের সঙ্গে সাংবাদিক পরিচয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “আপনি যেই হোন না কেন, আমাকে সরাসরি ফোন দেওয়ার কোনো অধিকার আপনার নেই।”

তার বর্তমান ঠিকানা জানতে চাওয়া হলে তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে বলেন, “আমার জাতীয় পরিচয়পত্রে যা দেওয়া আছে, সেটাই ঠিকানা। চেয়ারম্যানের কাছে যান, জানতে হলে সরকারের কাছে যান।” এরপর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

অন্যদিকে, ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের নামে নিবন্ধিত একটি গ্রামীণফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি রিসিভ করেন দেবীগঞ্জ উপজেলার কাদেরের মোড় এলাকার মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি।
ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উনার নাম্বার আমার কাছে আছে। আমি আদালতে তার একটি মামলা দেখাশোনা করছি।”
পরে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান যেহেতু ভারতীয় নাগরিক, তাহলে তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে আপনি কি কোনোভাবে সহযোগিতা করছেন? উত্তরে তিনি কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “এটা তাদের বিষয়, অফিসের বিষয়। আমি পরে কথা বলবো।” এরপর তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এদিকে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনে উল্লেখিত জন্ম নিবন্ধন নাম্বার, হোল্ডিং নাম্বারের সূত্র ধরে মাড়েমা বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় ভবেন্দ্র নাথ এবং বজেন্দ্র নাথ যেই জন্মনিবন্ধন নাম্বার উল্লেখ করেছেন তা অন্য ব্যক্তির। এছাড়া যেই হোল্ডিং নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছিল জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনে তার সাথেও বাস্তবে কোন মিল নেই।

এবিষয়ে মারেয়া বামনহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম জানান, তারা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বামনহাট ইউনিয়নের জায়গীর পাড়া এলাকা থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র উত্তোলন করেছেন। এই বিষয়টি আমি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি তদন্ত করে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দুটি বাতিল করার জন্য লিখিতভাবে অবগত করি।

এদিকে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিলের আবেদন পাওয়ার পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি সেই আবেদন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠিয়েছেন বোদা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

এবিষয়ে মুঠোফোনে বোদা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তকদির আলী সরকার বলেন, তারা যখন জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করেন তখন সব কাগজপত্র ঠিক ছিল। পরবর্তীতে মাড়েয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জালিয়াতির বিষয়টি জানালে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল করা হবে।

এদিকে, দীর্ঘ দুই মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন কমিশন এখনও দুই ভারতীয় নাগরিকের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল করেনি।

এবিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ.এস.এম হুমায়ূন কবিরের টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে কল রিসিভ না হওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পরিশেষে, এ ঘটনা শুধু প্রশাসনিক দুর্বলতার নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও গুরুতর হুমকি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2024
Powered by: Nfly IT