লালন সরকার, দেবীগঞ্জ
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার বি,এল উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক , ঝাড়ুদার এবং আয়া পদে নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । পরীক্ষার আগেই উক্ত তিন পদে তিন জনকে নির্বাচিত করার জন্য বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ কমিটির সদস্য বৃন্দ ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন প্রার্থীদের নিকট হতে নিয়োগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকার পরিবর্তন হলে নিয়োগ বাতিল হয় ফলে নিয়োগের জন্য গ্রহণ কৃত অর্থ ফেরত দিতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আলম ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মন্জুরুল ইসলাম বাবু। এদিকে ভুক্তভোগী সবুজ শর্মা টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জানা গেছে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক দ্রুত সমস্যা সমাধান করার জন্য সেনাবাহিনীর নিকট প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি পদে নিয়োগ প্রত্যাশী সবুজ শর্মা বলেন, অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ১২ লক্ষ টাকা দিয়েছি নিয়োগ কমিটির সদস্যদের কাছে ৩ দফায়। প্রথম দফায় ২ লক্ষ টাকা ৩ নং সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় এর অভিভাবক সদস্য মো: আব্দুল মজিদের উপস্থিতিতে মনজুরুল ইসলাম বাবু ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বাড়িতে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় ৭ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিসকক্ষে। আর বাকি ৩ লক্ষ টাকা তৃতীয় দফায় প্রধান শিক্ষকের দেবীগঞ্জ পৌর এলাকার মুন্সিপাড়া ভাড়া বাড়িতে দিয়ে আসছি। পরে আমার নিয়োগ না হওয়ার কারনে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। বাকি ৯ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা এখনো দেয়নি। যার কারনে আমি সেনা ক্যাম্পে অভিযোগও দিয়েছি। অভিযোগ দেয়ার পর প্রধান শিক্ষক রফিকুল আলম ও সভাপতি মন্জুরুল ইসলাম বাবু সেনাবাহিনীর কাছে সময় নিয়েছে টাকা ফেরত দেবার জন্য। কিন্তু কবে টাকা পাবো সেটা আমি এখনও জানিনা। চাকরি পাওয়ার আশায় উক্ত অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ও এনজিও র মাধ্যমে ঋণ করে তাদের প্রদান করি টাকা ফেরত না পেলে আমার পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসা ছাড়া আর কোন রাস্তা থাকবে না।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মন্জুরুল ইসলাম বাবু সোনাহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও দেবীগঞ্জ মহিলা কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।
এ বিষয়ে সভাপতি মনজুরুল ইসলাম বাবুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, স্কুলের বিষয় নিয়ে কথা বলার কোন সুযোগ নাই। আমি বাইরে আছি। এটা নিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আলম বলেন, নিয়োগের যে টাকা আছে সেগুলো ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য আব্দুল মজিদ (মেম্বার) কাছে আছে। আমার কাছে কোন টাকা নাই। মজিদ মেম্বার নিয়োগ কমিটির ক্যাশিয়ার ছিল। তিনি আরও বলেন, মজিদ মেম্বার, হাব্বুল আর ডাবলুর ইন্ধনে এসব হচ্ছে।
উল্লেখ্য, নিয়োগের নাম করে নেয়া ঘুষের টাকার বিষয়ে (২৮ নভেম্বর) বিদ্যালয় চত্বরে মিমাংসার জন্য বসা হলে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য মো: আব্দুল মজিদের সাথে বাকবিতন্ডায় এক পর্যায়ে হাতাহাতি ও মারামারি পর্যন্ত হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে প্রধান শিক্ষক এলাকাবাসী নিকট বিষয়টি নিয়ে সমাধানের জন্য (১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সময় নেন। ১লা ডিসেম্বরে বিদ্যালয়ের সভাপতি অনুপস্থিত থাকার কারনে ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আলম ঘুষের টাকা ফেরত না দেয়ার কারনে আর মিমাংসা হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বিকেল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসি ও নিয়োগবঞ্চিতরা।
এ বিষয়ে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বিদ্যালয়ের সকল বিষয় নিয়ে মীমাংসায় বসার কথা আছে বলে জানা যায়।
Leave a Reply