বিশেষ প্রতিবেদক
ক্ষমতার ছায়ায় বেড়ে ওঠা আর দুর্নীতির বিষবৃক্ষ এখন নগর গণপূর্ত বিভাগের চার নম্বর কার্যালয়ে। সেখানে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে আসীন মোঃ মাসুদ রানা—যার নাম উচ্চারণ করলেই শাসরুদ্ধ পরিবেশে ফাইলের পাতা কাঁপে, বাতাসে ছড়ায় ঘুষে ভেজা চুক্তিপত্রের গন্ধ। সরকারি চাকরির চাদরে মুড়ে নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘মিস্টার ১৫%’ হিসেবে—যিনি প্রকল্পের নামে, কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে, ঠিকাদারদের পকেট কেটে গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির সাম্রাজ্য।
ঢাকার শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-৩-এ দায়িত্ব পালনকালে মাসুদ রানা ছিলেন যেন লুটপাটের এক নির্বিচার সেনাপতি। সেখানে তিনি সরকারি প্রকল্পের ব্যয় কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে, দরপত্রের গোপনীয়তা ভেঙে পছন্দের ঠিকাদারদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে, রাষ্ট্রীয় অর্থকোষে চালিয়েছেন নিঃশব্দ ডাকাতি। অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, টেবিলের নিচ দিয়ে হাত চালিয়ে এই নির্বাহী প্রকৌশলী গিলে ফেলেছেন হাজার কোটি টাকার বেশি বাজেট।
সেখান থেকে নিজের ইচ্ছামতো বদলি নিয়ে মাসুদ রানা এখন ঘাঁটি গেড়েছেন রাজধানীর নগর গণপূর্ত বিভাগ-৪-এ। এখানে এসে দুর্নীতির রুটিনে যোগ হয়েছে আরও ঘৃণ্য অধ্যায়—রাজনৈতিক লেনদেন। অভিযোগ রয়েছে, গত বছরের জুলাইয়ে মিরপুরে এক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা ঢেলেছেন ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীর হাতে, যার মধ্যস্থতায় ছিলেন রাজধানীর আলোচিত এমপি মাঈনুল হোসেন খান নিখিল।
তবে শুধু দুর্নীতিই নয়—মাসুদ রানার বিলাসবহুল জীবনের অনুচ্চারিত গল্পগুলোও ইতিমধ্যেই ‘ওপেন সিক্রেট’ এ পরিণত হয়েছে। রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে তার নিয়মিত উপস্থিতি, রঙিন সন্ধ্যা, মদের পার্টি আর দেহ ব্যবসার আসর এখন আর গোপন কিছু নয়। ঠিকাদারদের পয়সায় চলে তার রাতভর ভোগ-বিলাস, যেখানে অফিসের নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে যায় লালচে গ্লাসের তলানিতে।
তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একবার বিক্ষোভে নামলে শেরে বাংলা নগর থানার সামনে উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। মাসুদ রানার অপসারণের দাবি ওঠে সরব কণ্ঠে। কিন্তু সবকিছু থেমে যায় অদৃশ্য এক রাজনৈতিক ছায়ার প্রভাবে। অভিযোগ আছে, মাসুদ রানার পেছনে রয়েছেন এমন এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক অভিভাবক, যার ছত্রচ্ছায়ায় তার অপকর্ম দিনের পর দিন নির্লজ্জভাবে চলেই যাচ্ছে।
এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মাসুদ রানার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত পরিদর্শক সুমনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তাতেও কোনো সাড়া মেলেনি। ফলে তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক:মোঃ খলিলুর রহমান নির্বাহী সম্পাদক মোঃ মোফাজ্জল হোসেন
Copyright © 2025 দৈনিক সময়বেলা. All rights reserved.