মো: মোসলেম উদ্দিন সিরাজী
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ইট ভাটার আগুনে ৯৭ জন কৃষকের ২শত বিঘা জমির ধান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এজিএন ভাটার মালিক হাজি মনির বিরুদ্ধে। কৃষি অফিস জানিয়েছে এই আগুনে ৯টি স্কিমের ১৯২ বিঘা জমির ধান পুরোপুরি নষ্ট হওয়ায় ২৩১.৬ মে.টন ধান সম্পূর্ণ ভাবে পুড়ে গেছে। এতে ঐ এলাকার প্রায় ১শ’ জন কৃষকের ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বুধবার (১৪ মে) বেলা ১১টার দিকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদে এসে ভাটা মালিকের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে শ্লোগান দিতে থাকে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামানের সাথে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা সাক্ষাৎ করেন এবং ভাটা মালিকের সর্বোচ্চ শাস্থি ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন। ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের স্বরূপপুর গ্রামে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সোমবার দিবাগত রাতে হঠাৎ ভাটার চিমনি দিয়ে বের হওয়া আগুনে পুড়ে গেছে কৃষকের ২ শত বিঘা জমির ধান। আর কেবল ফুলে বের হওয়া কাচা ধান পুড়ে যাওয়ায় শতশত মানুষকে জমিতে গিয়ে বুকফাটা আর্তনাদ করতে দেখা যায়। মঙ্গলবার বিকেলে শাহজাদপুর কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি অফিসার আজিজুল হক উপস্থিত হলে ভুক্তভোগী কৃষকেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বুকফাটা আর্তনাদ করতে করতে পুড়ে যাওয়া ধানের জমিতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় ভুক্তভোগী একজন ষাটোর্ধ বৃদ্ধা নারী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সংবাদ কর্মীদের জানান, তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন যাবত বিছানাগত। সস্তানেরা কেউ থাকে না তার সাথে। অনেক কষ্ট করে এই বৃদ্ধ বয়সে ৫০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করছিলেন। কিন্তু মনি হাজি ইচ্ছে করে ভাটার আগুন ছেড়ে দিয়ে সব ধান পুড়িয়ে দিয়েছে। “সারাবছর কি খেয়ে থাকবো” বলে আর্তনাদ করতে থাকেন এই বৃদ্ধা।ভুক্তভোগী অন্য কৃষক হাসানুর প্রামাণিক, ফিরোজা বেগম, কালু প্রামানিক, আবদুল হানিফ সরকার, ফিরোজা বেগমসহ শতাধিক কৃষক জানান, গতবছরও মনি হাজি রাতের অন্ধকারে ইচ্ছাকৃতভাবে ভাটার আগুন ছেড়ে দিয়ে কৃষকের ধান পুড়িয়ে দিয়েছিল। পরে কৃষকদের আন্দোলনের মুখে কিছু কৃষককে ক্ষতিপূরণ দিলেও এবছর শত্রুতাবশত শতাধিক কৃষকের অন্তত ২শত বিঘা জমির ধান পুড়িয়ে দিয়েছে। অবৈধ ভাবে গ্রামের মধ্যে কৃষি জমির উপর ভাটা স্থাপন করে ব্যবসা করে কৃষকদের ক্ষতিসাধন করছে।এ বিষয়ে উপসহকারি কৃষি অফিসার মোঃ আজিজুল হক ভাটার আগুনে ধান পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ‘সরেজমিনে পরিদর্শন করে ৯টি স্কিমের প্রায় ১৯৩ বিঘা জমির ধান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এতে কৃষকের প্রায় ২৩১.৬ মে.টন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। এদিকে এজিএন ভাটায় গেলে ভাটার শ্রমিক ম্যানেজারসহ মালিকপক্ষ পালিয়ে যাওয়ায় কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক:মোঃ খলিলুর রহমান নির্বাহী সম্পাদক মোঃ মোফাজ্জল হোসেন
Copyright © 2025 দৈনিক সময়বেলা. All rights reserved.