রনি আজিম
সমাজ কি মানুষ যে আমরা তার প্রাপ্য ফিয়ে দিব, আর তার আবার চাওয়ার কি আছে আর পাওয়াইবা কি আছে। এইসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার মথায় তাইনা! আগে জানি আমরা সমাজ কাকে বলে-সমাজ বলতে মূলত এমন এক ব্যবস্থা বোঝায়, যেখানে একাধিক চরিত্র একত্রে কিছু নিয়ম-কানুন প্রতিষ্ঠা করে একত্রে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলে। মানুষের ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তি একত্র হয়ে লিখিত কিংবা অলিখিত নিয়ম-কানুন তৈরি করে; এরকম একত্র বসবাসের অবস্থাকে সমাজ বলে।তার মানে কি বুজলেন আপনি যেখানে বড় হয়েছেন শুধু কি আপনার মা-বাবা,ভাই-ভোন আত্বীয়-স্বজন টাকা পয়সা দিয়েছেন ,খাইয়েছেন এইজন্য আপনি বড় হয়েছেন বা ভালো কিছু করতে পেরেছেন। না, এমন মনে করা পুরোপুরি ঠিক হবে না।আপনার সমাজ আপনাকে আলো-বাতাস,পানি, সংস্কৃতি সর্বোপরি আপনাকে একটা পরিবেশ দিয়েছেন যার মধ্যে দিয়ে আপনি বেড়ে উঠেছেন। এহন আপনি বড় হয়ে যদি আপনার বাবা-মার দাইত্ব যেমন নেন তেমন আপনারা সমাজের কিছু কিছু দাইত্ব নিতে হবে ,এইটা আপনারা প্রতি সমাজের অধিকার। এইখানে আমি সমাজের এই অধিকার বা প্রাপ্যতার কথা বুঝাতে চেয়েছি। আর এই অধিকার বা প্রাপ্যতা নানা উপায়ে সমাজ কে দেওয়া যায়-
১. শাসনের অধিকার প্রদান: দিন দিন বড়োরা ছোটোদের শাসন করার অধিকার হারিয়ে ফেলছে। কেউ নিজের সন্তানকে শাসন করার অধিকার অন্য কাউকে দিচ্ছে না। এই সামাজিক শাসনের অভাবে মানুষ, বিশেষ করে যুবসমাজ স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতি কারো জন্য কাম্য নয়। আমরা সমাজকেন্দ্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক। আমরা চাই সমাজ আমাদের সংকট সমাধানে এগিয়ে আসুক। সমাজ আমাদের ভালো-মন্দের দায়িত্ব নিক। আমার সন্তান তো আমার সমাজেরও সন্তান। তাকে শাসন করার অধিকার সমাজের থাকুক। আর এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেই সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে বেড়ে উঠবে নতুন প্রজন্ম।
২. স্থানীয় শালিস প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা: আমাদের দেশে সামাজিক শাসনের একটি ঐতিহ্য আছে। সামাজিক শাসন মেনে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা সে ঐতিহ্যেরই অংশ। বর্তমান সময়ে যেসব বিষয় নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হয় এবং মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বাদী-বিবাদী নিঃস্ব হয়ে যায়, এক সময় সেসব বিষয় সামাজিক বিচার বা সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হতো। গ্রামের মাতব্বরগণ প্রয়োজন মনে করলে কয়েক গ্রামের মাতব্বর নিয়ে সালিশে বসতেন। এ সালিশের বিচার বা শাসন মেনে নিয়ে সবাই আবার মিলেমিশে বসবাস করতো। এতে সমাজভুক্ত মানুষ মামলার হয়রানি ও মামলা খরচ থেকে রেহাই পেত। বিচার পেতেও দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হতো না। কিন্তু বর্তমানে সামাজিক ন্যায়বিচারের সে সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে সামাজিক বিচার না মেনে বেশিরভাগ মানুষ আইনের আশ্রয় নেয়। মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতার ফলে আদালতে মামলা-জট লেগে যায়। মামলা শুরু হলেও সহজে শেষ হয় না। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের স্বাভাবিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।তাই এত থানা-পুলিশ দারস্থ না হয়ে সামাজিকভাবে বসে স্থানীয় শালিস এর মাধ্যমে সমাধানের পথ খোজা উচিৎ।
৩. সামাজিক ব্যভিচারের বিরুদ্ধচারণ: অপরাধে কিছু গোপনে হয়, আর কিছু প্রকাশ্যে। অপরাধ যেভাবেই করুক না কেন, তার কুফল সে ভোগ করবে। তবে প্রকাশ্যে যে অপরাধ করা হয় তার ভয়াবহতা আরো মারাত্মক, তার প্রভাব সমাজে বড়ই ক্ষতিকর। আল্লাহ তাআলা যেকোনো ধরনের অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য আদেশ করেছেন। কারণ অশ্লীলতা মানুষকে ধীরে ধীরে ব্যভিচারের দিকে আহ্বান করে।আর অশ্লীলতা বা ব্যভিচার যে বা যারাই কুরবে তার হাত যত বড়ই হোক না কেন ,সমাজের সবাই মিলে এর প্রতিবাদ করতে হবে অথবা বুজিয়ে বলে তা থেকে বের করে আনতে হবে।
৪. সামাজিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ: সামাজিক নানাবিধ উন্নয়নমুল কাজ যেমন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া , কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেওয়া, বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থাকা, রাস্তা-ঘাট ,স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা অথবা যেকোনো আচার অনুষ্ঠানে সাধ্যমত এগিয়ে আসাসহ নানান সামাজিক উন্নয়নে অংশগ্রহন করার মাধ্যমে সমাজকে আলোকিত করে তুলুন।
৫. মাদক নির্মূলে সমাজের ভূমিকাই মুখ্য: মাদকাসক্তি একটি বহুমাত্রিক জটিল সমস্যা। এ ব্যাধি দূর করতে দরকার সমন্বিত কর্মপ্রয়াস। সরকারের একার পক্ষে এর নিরসন সম্ভব নয়। মাদকাসক্তি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা। পরিবার ও সমাজজীবন থেকে মাদকদ্রব্য উত্খাত এবং মাদকাসক্তি নির্মূল করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধের জাগরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন।
৬. সামাজিক সহ-অবস্থান নিশ্চিতকরণ: সমাজে কোন বিবেধ থাকবেনা দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হয়ে ,ধনী গরীব ভেদাবেদ ভুলে, শিক্ষিত-অশিক্ষিত পার্থক্য না করে , ধর্ম-কর্ম বিভাজন না করে সকলের মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সমাজে সহ-অবস্থান নিশ্চিত করব আমরা।
সর্বোপরি এইটা বলতে পারি আমরা,আপনি/ আমি যেই সমাজে বেড়ে উঠেছি, তার জন্য মন থেকে কিছু আসলেই একটা কিছু করা উচিৎ সবার।এইটা যেকোনো উপায়ে হতে পারে ,শুধু যে টাকা দিয়ে করতে হবে এমন কিন্তু নয় টাকা ছাড়াও অনেক ভালো কিছু করা যায় সমাজের জন্য।সমাজে বড় হয়েছেন এহন মাঝে মাঝে এসে লোভ দেখানো কিছু করছেন যেমন ছবি তুলেছেন ঘন্টায় ঘন্টায় , মানুষকে ঘোরান মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে, নিজের বাইরে কিছু চিন্তা করেন না।আবার কিছু সমাজের লোক দেখবেন রাজনীতি করে সমাজের মানুষ ও পরিবেশ জিন্মি করে টাকা ইনকাম করে।আবার একশ্রেণী যেই সমাজের মানুষের সাথে বড় হয়েছে, সেখানেই মাদক বিক্রি করে সমাজকে দুষন করছে।আবার কিছু ক্রিমিনাল টাইপ লোক দেখবেন তাদের আচার ব্যবহার সমাজকে বা সমাজের মানুষকে নানাভাবে বিরক্ত করছে। আপনি/আমি একদিন মারা যাব যানাজা কিন্তু এই সমাজের মানুষই পড়াবে,বিশ্বাস করেন আর নাই করেন সমাজকে যদি আপনি কলোষিত করেন/অধিকার না দেন, সেদিন কিন্তু এই সমাজ আপনার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।তাই এখনো সময় আছে সমাজকে তার প্রাপ্যতা ফিরিয়ে দিন।
Leave a Reply